রবিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:১৯ পূর্বাহ্ন

দৃষ্টি দিন:
সম্মানিত পাঠক, আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। প্রতিমুহূর্তের সংবাদ জানতে ভিজিট করুন -www.coxsbazarvoice.com, আর নতুন নতুন ভিডিও পেতে সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল Cox's Bazar Voice. ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে শেয়ার করুন এবং কমেন্ট করুন। ধন্যবাদ।

হালাল উপার্জনের গুরুত্ব

এম কাউছার হামিদ:
জীবিকা নির্বাহের জন্য উপার্জন জরুরি। তাই ইসলামে উপার্জনের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছে। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘নামাজ সম্পন্ন হওয়ার পর পর তোমার জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ (হালাল রিজিক) তালাশ করো।’ সুরা জুমা : ২৮

কারও উপার্জন হালাল, কারওটা হারাম। কামাই-রুজিতে একটু হারাম প্রবেশ করলে সব বরকত নষ্ট হয়ে যায়। যার উপার্জন হারাম, তার সারা জীবন বরবাদ। কারণ তো সবার কাছেই স্পষ্ট। সন্তান-সন্ততির শরীর পরিপুষ্ট হয় হারাম খাবার দ্বারা। পোশাক-পরিচ্ছেদ ও যাবতীয় আসবাবপত্র সবই হারাম উপার্জনের। তার পুরো জীবন প্রতিষ্ঠিত হারামের ওপর। অঢেল সম্পদ কামাই করলেও সে বরকত থেকে বঞ্চিত। মহান রবের রহমত থেকে বিতাড়িত। একজন মুসলমানের জন্য হালাল কামাই অপরিহার্য বিষয়। হালাল উপার্জনে রয়েছে বরকত আর বরকত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি সৎ পন্থায় সম্পদ উপার্জন করে থাকে তাকে এর মধ্যে বরকত দেওয়া হয়।’ সহিহ মুসলিম : ২৩১১

হালাল কামাই ফরজ ইবাদত

হালাল রিজিক অন্বেষণ করা ইসলাম আবশ্যক করে দিয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘অন্য ফরজসমূহের পর একটি ফরজ হচ্ছে হালাল উপার্জন অন্বেষণ করা।’ বায়হাকি : ৪৬০

বান্দা হালাল রোজগারের কারণে সওয়াব লাভ করে। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘পুরুষের জন্য তার উপার্জনের কারণে সওয়াব রয়েছে। সহিহ বোখারি : ১৪২৫

তা ছাড়া নিজ হাতে উপার্জন করা নবীদের সুন্নত। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিজ হাতে উপার্জিত খাদ্যের চেয়ে উত্তম খাদ্য কখনো কেউ খায় না। আল্লাহর নবী হজরত দাউদ (আ.) নিজ হাতে উপার্জন করে খেতেন।’ সহিহ বোখারি : ২০৭২

অবৈধ উপার্জন নিষিদ্ধ

অন্যায়ভাবে কারও সম্পদ আত্মসাৎ করা এবং কারও অসন্তুষ্টি সত্ত্বেও তার মাল গ্রহণ করা আল্লাহতায়ালা হারাম করে দিয়েছেন। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভক্ষণ করো না।’ সুরা নিসা : ৫৯

সুদ, ঘুষ, জুয়া, লটারি, জুলুমের সম্পদ ইত্যাদি অবৈধ উপার্জন ‘অন্যায়ভাবে অপরের সম্পদ ভক্ষণ’-এর অন্তর্ভুক্ত। তা ছাড়া সুদ ও জুয়া স্বতন্ত্রভাবেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো মুসলমানের অন্তরের সন্তুষ্টি ছাড়া তার মাল অপর কারও জন্য হালাল নয়।’ সহিহুল জামে : ৭৬৬২

হারাম উপার্জনে বাস্তবেও আরাম নেই। হাদিসে এসেছে, ‘যে এই সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করে সে ওই ব্যক্তির ন্যায়, যে খেতে থাকে কিন্তু পেট ভরে না, পরিতৃপ্ত হয় না।’ সহিহ বোখারি : ১৪৬৫

অবৈধ উপার্জনের ব্যাপারে হাশরের মাঠে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগ পর্যন্ত আদম সন্তানের পদদ্বয় আল্লাহর নিকট হতে সরতে পারবে না। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা হতে তা উপার্জন করেছে এবং তা কী কী খাতে খরচ করেছে।’ সুনানে তিরমিজি : ২৪১৬

জান্নাতের প্রতিবন্ধক

হারাম উপার্জনকারী হারাম সম্পদ দিয়েই জীবিকা নির্বাহ করে। তার দেহ হারাম খাবার দ্বারা গঠিত হয়। এমন ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবে না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে শরীর হারাম দ্বারা প্রতিপালিত, তা জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ মেশকাত : ২৭৮৭

জান্নাত লাভের আশা থাকলে অবশ্যই হালাল উপার্জন করতে হবে। হালাল খাবার খেতে হবে। হারাম উপার্জন ও হারাম হাদিয়া-তোহফা বর্জন করতে হবে।

ইবাদত কবুলের শর্ত

হারাম ভক্ষণকারীর ইবাদত কবুল হয় না। ফরজ আদায় হয় ঠিকই, কিন্তু সওয়াব ও নৈকট্য লাভ হয় না। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে রাসুলগণ! তোমরা উত্তম খাবার ভক্ষণ করো এবং নেক আমল করো।’ সুরা মুমিনুন : ৫১

এখানে নেক আমলের পূর্বে হালাল খাওয়ার কথা বলা হয়েছে। আয়াতে বর্ণিত রাসুলগণ শব্দ দ্বারা উম্মতের সব ইমানদারই উদ্দেশ্য। হালাল খাদ্য গ্রহণ আবশ্যক ঘোষণা দিয়ে আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের আমি যে রিজিক দিয়েছি, তা হতে পবিত্র হালাল খাবার ভক্ষণ করো।’ সুরা নাহল : ১২৪

দোয়া কবুল হয় না

দোয়া কবুলেরও পূর্ব শর্ত হচ্ছে হালাল রোজগার ও ভক্ষণ। যে হারাম কামাই করে, তার দান-সদকাও আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য নয়। তার দোয়াও আল্লাহ কবুল করেন না। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহতায়ালা পবিত্র, তিনি পবিত্র ও হালাল বস্তু ছাড়া গ্রহণ করেন না। অতঃপর নবীজি (সা.) এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দূরদূরান্ত পর্যন্ত দীর্ঘ সফর করে। ফলে সে ধূলি-ধূসরিত রুক্ষè কেশধারী হয়ে পড়ে। অতঃপর সে আকাশের দিকে হাত তুলে বলে, হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং আহার্যও হারাম। কাজেই এমন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ কীভাবে কবুল করতে পারেন?’ সহিহ মুসলিম : ২২৩৬

উপার্জনে সাবধানতা

পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, আমরা হালাল উপার্জনের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি না। যথেচ্ছা হারাম কামাই করছি। নবউদ্ভাবিত বিভিন্ন বিজনেস প্ল্যাটফরমে অবাধে যোগদান করে প্রতারিত হচ্ছি। হালাল-হারাম যাচাইয়ের জন্য আলেমদের শরণাপন্ন হচ্ছি না। এ যেন হাদিসের বাস্তব নমুনা। হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মানুষের কাছে এমন এক জমানা আসবে, যখন সে কোনো পরোয়া করবে না, সে কোথায় হতে উপার্জন করছে, হালাল হতে নাকি হারাম হতে।’ সহিহ বোখারি : ২০৮৩

ভয়েস/আআ

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2023
Developed by : JM IT SOLUTION